লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে মো. হারুনুর রশীদ (৪০) নামে এক ব্যবসায়ী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
সোমবার ভোরে উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কোম্পানির রাস্তা নামক এলাকায় নিজের দোকানে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। খবর পেয়ে সকাল পৌনে ৮টার দিকে পুলিশ তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
হারুন উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কোম্পানির রাস্তার মাথা এলাকার মৃত আমিন উল্লার ছেলে। তিনি স্ত্রী, তিন কন্যা ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনের মতো সোমবার ভোরে চা খেতে হারুনের দোকানে আসেন কয়েকজন। এ সময় দোকানের সাঁটার বন্ধ ছিল কিন্তু বাহিরে তালা লাগানো ছিল না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা শেষে দোকানের সাঁটার খুলে ভিতরে হারুনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান তারা। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন।
তারা আরও বলেন, এনজিওর লোকেরা কিস্তির টাকার জন্য দোকানে এসে প্রায়ই হারুনকে ধমকাতেন। সোমবার একটি সংস্থার ১৩ হাজার ৪০০ টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল তার।
প্রতিবেশী মো. হেলাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর ও নাসিমা বেগম যুগান্তরকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় চা দোকান করতেন হারুন। নামাজি মানুষ ছিলেন। বড়ো ভালো মানুষ ছিলেন। এনজিও থেকে কিস্তি তুলে দোকানে মালামাল তুলেছিলেন। লোকজন বাকিতে সদাই নিয়ে ঠিকমতো পরিশোধ না করায় কিস্তি পরিশোধ করতে পারতেন না। যে কারণে সবসময় চিন্তা করতেন। প্রায়ই স্যারদের অনেক কথা শুনতে হতো। রোববার সন্ধ্যায় এ নিয়ে কিস্তির অফিসের লোকজন এসে টাকা ম্যানেজ করে রাখার জন্য শাসিয়ে গেছেন। তিনি ঋণ নিয়ে দোকান ও সংসার চালাতেন। মূলত কিস্তির টাকার চাপেই হারুন আত্মহত্যা করেছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তারা।
সরেজমিন গেলে হারুনের স্ত্রী কুলছুম বেগম জানান, তার স্বামী ঋণের কিস্তির জন্যই আত্মহত্যা করেছেন। মাসে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হতো। এত টাকা চা দোকান থেকে আয় হতো না।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তার স্বামী। একটা মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত। ১১ বছর ও ৮ বছরের দুইটি ছেলে নিয়ে এখন আমি কী করব। তাছাড়া সব কিস্তিই তার নামে থাকার কথা বলতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন কুলছুম বেগম।
এ বিষয়ে এনজিও সংস্থার কমলনগর শাখা ব্যবস্থাপকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কমলনগর থানার ওসি তহিদুল ইসলাম জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।