মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
স্বৈরাচারের দোসর তথাকথিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (NHRC) কর্তৃক নির্যাতিত ও নিপীড়িত মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন-BHRC এর প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব মানবতাবাদী ড. সাইফুল ইসলাম দিলদার সহ সকল মানবাধিকার কর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার বিকালে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন মিঠাপুকুর উপজেলা শাখার আয়োজনে মিঠাপুকুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন মিঠাপুকুর উপজেলা শাখার সভাপতি বিধু রঞ্জন বর্মনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি এমদাদুল হক,সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মন্ডল,সাংগঠনিক সম্পাদক মাজারুল ইসলাম সোহাগ সহ প্রমূখ।
আশিকুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন-১৯৮৭ সালের ১০ই জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ১৬ নভেম্বর ২০০০ইং সালের ১৯৯৬/৩১ নং অধিবেশনে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন-BHRC বেসরকারি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন লাভ করে। অপরদিকে বাংলাদেশ সরকার, যুক্তরাষ্ট্র নিউ ইয়র্ক স্ট্যাট ডিপার্টমেন্ট এর নিবন্ধিত ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান যথাক্রমেঃ ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস-আইসিজে (জেনেভা),ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এ্যাগেইনস্ট টর্চার-ওএমসিটি (জেনেভা), আফ্রিকান কমিশন অন হিউম্যান এন্ড পিপলস রাইটস-এসিএইচপিআর সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ৮টি নিবন্ধন নিয়ে ৩৭ বছর যাবত মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। BHRC বাংলাদেশের সকল জেলা ও মহানগরসহ অধিকাংশ উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে মানবাধিকার কার্যক্রম বিনামূল্যে পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বে এই প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শাখার মাধ্যমে সুশীল সমাজের প্রায় দুই লক্ষ সদস্য মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে দেশের ক্রান্তিলগ্নে মানবতার সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সুনামী, মহামারীতে গণমানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর সময় মানুষ যখন নিজ প্রাণ রক্ষার্থে নিজেকে কোয়ারেন্টিনে আবদ্ধ করে রেখেছেন, তখন গণমানুষের জীবন রক্ষার্থে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণসচেতনতার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ, লকডাউনকালীন বস্তিবাসী, পথশিশু,গৃহহীন ফুটপাতে জীবনযাপনকারীসহ নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, খাবার বিতরণ, জীবাণুমুক্তকরণ
হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক এবং নগদ অর্থ বিতরণ করে বিশেষ অবদান রেখেছে মানবাধিকার সদস্য ও কর্মীদের নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতেও কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী এবং সিলেটে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার কর্মীগণ ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন তথা কাউন্সিলের নিবন্ধিত সদস্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনফারেন্সগুলোতে বেসরকারি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতিসংঘের আমন্ত্রণ লাভ এবং কনফারেন্সগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন জাতিসংঘের কনফারেন্সগুলোতে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে উদ্ভট বক্তব্য প্রদান করতে থাকেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন নাকি ভুল করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন-এর আমন্ত্রণপত্র বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনকে পাঠিয়ে দিয়েছে, যা যথারীতি হাস্যকর। উল্লেখ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের ৯ বছর পূর্বে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনকে বেসরকারি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন প্রদান করে এবং নিবন্ধন পাওয়ার পূর্ব থেকেই জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণ করে আসছে এনজিও প্রতিষ্ঠান হিসেবেই।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নাছিমা বেগম বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনকে হয়রানী করতে থাকে।BHRC বিদেশে তথ্য পাচার করছে এমন অজুহাতে বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক তদন্তের নামে হয়রানী করে। এরই মধ্যে নাছিমা বেগমের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ড. কামাল উদ্দিন আহমেদও নাছিমা বেগমের দিক-নির্দেশনারই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে জয়েন্ট স্টক অব কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরো-এর রেজিস্ট্রার বরাবর পত্র পাঠিয়ে প্রভাব খাটিয়ে BHRC’র নিবন্ধন বাতিল করে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং কেন সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে নিবন্ধন বাতিল করা হলো এই মর্মে হাইকোর্ট জয়েন্ট স্টক অব কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস’র বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি করে। অপরদিকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকেও বিষয়টি ডিসপোজালের অর্ডার এবং পরবর্তীতে রুলনিশি জারি করে। কিন্তু উভয় দুটি ডিপার্টমেন্ট জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চাপে বিষয়টি আজ অবধি সুরাহা করেনি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় ৩৫টি দেশে মানবাধিকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে তন্মধ্যে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্ট্যাটে ২২টি শাখা মানবাধিকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যুক্তরাজ্য শাখা কর্তৃক ৬ আগষ্ট ২০২৩ তারিখে একটি কনফারেন্স-এর ঘোষণা দেয়া হয় জুন মাসে। কনফারেন্সের ঘোষণাটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসলে ১০ জুন ২০২৩ইং তারিখে তেজগাঁও থানায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি প্রতারণা এবং মানবপাচারের মিথ্যা মামলা ড. সাইফুল ইসলাম দিলদার এর নামে দায়ের করে এবং ১১ জুন ২০২৩ইং তারিখে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন-এর মহাসচিবসহ সকল স্টাফদের গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানায় নিয়ে ফরওয়ার্ডিংয়ের মাধ্যমে সকল স্টাফকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরদিন ১২ জুন ২০২৩ইং তারিখে ডিসি অফিসে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ডেকে টিভি সহ প্রিন্ট মিডিয়ায় মানবপাচারকারী চক্র হিসেবে চিহ্নিত করে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতে বাধ্য করা হয়। উক্ত সংবাদ টিভি ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে প্রতিটি মানবাধিকার কর্মী
সামাজিকভাবে মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। অথচ বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন মানবপাচার, মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কক্সবাজার, টেকনাফ সহ দেশের জেলায় জেলায় অসংখ্য সভা, সেমিনার,মানবন্ধন করেছে। মানবাধিকার কর্মী আটককৃতদের মধ্যে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রও ছিল, যে গ্রেফতারের একদিন পূর্বে লেখাপড়ার পাশাপাশি মানবাধিকার কার্যক্রমে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য যোগদান করেছিল। ছাত্রটিকে ছেড়ে দিতে অনেক অনুনয় বিনয় করলেও রেহাই দেয়নি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দীন আহমেদ।
স্বল্প বেতনের স্টাফগণ গ্রেফতারের কারণে তাদের পরিবার মামলা পরিচালনা এবং জীবিকা নির্বাহে মানবিক বিপর্যয়ে পতিত হয়। নিরূপায় হয়ে মানবাধিকার কর্মীদের পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে উপস্থিত হয়ে স্টাফদের জামিন দিতে অনুনয়-বিনয়ে কোন লাভ হয়নি, বরং দুর্ব্যবহার করে স্টাফ পরিবারের সদস্যদের তাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ ১৫ মাস হয়ে গেলেও মামলা থেকে কাউকে রেহাই দেয়া হয়নি বরং মহাসচিব ড. সাইফুল ইসলাম দিলদার জামিনে আসলেও আবার জামিন বাতিল করে নিম্ন আদাললতে সারেন্ডার করতে বাধ্য করা হয়। সারেন্ডার পরবর্তী আবার জামিন লাভ করলে জামিন স্টে করে দেয়া হয়। এভাবে দিনের পর দিন ড. সাইফুল ইসলাম দিলদারকে বন্দীকরে রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইট এবং কর্মনির্দেশিকা বই থেকে স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার নেতৃবৃন্দদের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে একেক করে বহুজনকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে হয়রানি করা হয়, মোটা অংকের চাঁদা টাকা ডিমান্ড করা হয়। ডিবিকে খুশি করতে না পারলে উক্ত মামলায় আসামী করে ফরওয়ার্ডিং দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। দিনের পর দিন এভাবে স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার কর্মীগণ হয়রানীর শিকার হয় এবং হয়রানী থেকে রেহাই পেতে মানবাধিকার কর্মীগণ বাসা ত্যাগ করে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকতে হয়।
উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের পরামর্শে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ১৯৯৮ইং সাল থেকে দেশে বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় সর্বশেষ ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে এবং ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জাতীয় মানবাধিকার
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ জনগণের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও রাষ্ট্র সুবিধা ভোগ করে বিলাসী জীবনযাপন করে চলেছেন। বিগত সরকারের গুম, হত্যা, মিথ্যা মামলা এবং সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যাকে সমর্থন দিয়েছেন মুখে কুলুপ এঁটে। অপরদিকে সরকারের গুণকীর্তন করে পাকাপোক্ত করে রেখেছেন নিজের চেয়ারটাকে।এত ঘটনা-অঘটনার মধ্যে কোনদিনও গঠনমূলক বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি বিগত
সরকারের আমলে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলো মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বললে, তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি এবং দমন-পীড়নে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ।
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন উপদেষ্টাগণ জনগণের স্বপ্ন পূরণে আশা জাগাচ্ছে। আমরা আশাবাদী দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা,মানুষের ভোটের অধিকারসহ মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে এবং দেশ উন্নয়নে এক ইতিহাস রচনা করবেন, যা অনন্তকাল স্মরণ রাখবে বাংলার আপামর জনগণ। আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিবকে মুক্তিদান ও মিথ্যা মামলা থেকে সকল মানবাধিকার কর্মীদের দায়মুক্তি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিনকে অপসারণ করে সেস্থলে যোগ্য ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান পদে অধিষ্টিত করার জোর আহবান জানাচ্ছি।
Leave a Reply